Menu Close

Fact Sheet

What is Mental Health মানসিক স্বাস্থ্য কি?

মানসিক স্বাস্থ্যের ১, ২, ৩, ৪,

বেশীরভাগ লোক মানসিক স্বাস্থ্য শব্দটি শুনলেই মানসিক রোগের কথা ভাবেন। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। যখন আমরা দুখ, মনের শান্তি, আনন্দ বা তৃপ্তির কথা বলি আসলে আমরা তখন মানসিক স্বাস্থ্যের কথাই বলি।

মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে মাছে। এর মানে হচ্ছে, মানুষ তার পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, খেলাধুলায়, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামাজিক ক্রিয়াকলাপ, মাচার-আচরন ইত্যকার সকল ক্ষেত্রে যেভাবে প্রতিদিন চাটায় তারই সার্বিক প্রকাশ হল মানসিক স্বাস্থ্য।

১. মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য:

▶ তারা নিজেদের সম্পর্কে ডালো অনুভব করেন

▶ তারা ভয়, ক্রোধ, ভালবাসা, ঈর্ষা, অপরাধবোধ, উদ্বিগ্নতা ইত্যকার আবেগে নিজেদের আচ্ছন্ন করে ফেলেন না।

▶ তারা জীবনের হতাশাগুলোকে সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন।

▶ নিজেদের ও অন্যদের প্রতি তাদের একটা সহিষ্ণু ও সহজ-সরল মনোভাব থাকে এবং তারা নিজেদের সবকিছুকে হাসিমুখে গ্রহণ করতে পারেন।

▶ তারা তাদের ক্ষমতাকে ছোট বা বড় করে দেখেন না।

▶ তারা তাদের অক্ষমতাকে মেনে নেন।

▶ তারা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ।

▶ তারা বিভিন্ন অবস্থার সাথে মানিয়ে চলতে পারেন।

▶ তারা সাধারণ ও নৈমিত্তিক বিষয় থেকে আনন্দ লাভ করেন।

২. তারা অন্যদের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন

▶ তারা অপরকে ভালবাসেন ও অন্যের স্বার্থকে বিবেচনা করেন।

▶ তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলি তৃপ্তিকর ও টেকসই হয়।

▶ তারা অন্যদের পছন্দ ও বিশ্বাস করেন এবং অন্যরাও তাদের পছন্দ ও বিশ্বাস করবে বলে আস্থা রাখেন।

▶ তারা মানুষে মানুষে বিদ্যমান স্বকীয় পার্থক্যগুলিকে সম্মান করেন।

▶ তারা অপরের ভালোমানুষির সুযোগ নেন না এবং নিজেদের ভালোমানুষিকেও ব্যবহারের সুযোগ দেন না।

▶ তারা নিজেদের নিজ নিজ গোষ্ঠী বা সমাজের একটা অংশ বলে গন্য করেন।

▶ তারা আশেপাশের মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে বলে অনুভব করেন।

৩. তারা জীবনের দাবী পূরণ করতে সক্ষম

▶ কোন সমস্যায় পড়লে তা দূর করার জন্য তারা কিছু একটা করতে পারেন।

▶ তারা তাদের দায়িত্ব স্বীকার করেন।

▶ তারা তাদের পরিবেশকে সাধ্যমত গড়ে নেন অথবা প্রয়োজন অনুসারে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলেন।

▶ তারা আগাম পরিকল্পনা করেন এবং অনাগত ভবিষ্যতকে ভয় পান না।

▶ তারা নতুন অভিজ্ঞতা ও ধারণাকে স্বাগত জানান।

▶ তারা তাদের মেধাকে কাজে লাগান।

▶ তারা নিজেদের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করেন।

▶ তারা তাদের নিজস্ব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম।

▶ কর্মসাধনে সাধ্যমত চেষ্টা করার মাধ্যমে তারা সন্তুষ্টি লাভ করেন।

মানসিক সুস্থতা ও অসুস্থতার মধ্যে পরিস্কার বিভাজন নেই। উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের সবগুলিই সবসময় একজন মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির মাঝে নাও থাকতে পারে।

৪. মানসিক অসুস্থতার প্রধান লক্ষণ

▶ অহেতুক মানসিক অস্থিরতা, দুঃচিন্তা, ভয়ভীতি, আতংক, মাথাব্যাথা, খিঁচুনী, মূর্ছা যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, একই চিন্তা বা কাজ বারবার করা।

▶ মানসিক অবসাদ, বিষন্নতা, অশান্তি, বিরক্তি, অসহায়বোধ, কাজে অনীহা ও অমনো- যোগিতা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, আত্মহত্যার ইচ্ছা।

▶ অতিমাত্রায় রাগ, অহেতুক মারামারী করা, অস্বাভাবিক আচরণ, সন্দেহ প্রবণতা, একা একা হাসা ও কথা বলা, ভ্রান্ত বিশ্বাস, গায়েবী আওয়াজ শোনা, নিজেকে বেশী ক্ষমতাবান বা বড় মনে করা, স্বাভাবিক বিচার বিবেচনা লোপ পাওয়া।

▶ মাদক দ্রব্য গ্রহণ-দৈনন্দিন জীবন যাপনে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকতা, বিলম্বে বাড়ী ফেরা, অসময়ে বেশী ঘুমানো, পারিবারিক-সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্বে অবহেলা, অজানা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়।

▶ নানাবিধ যৌন সমস্যা।

▶ দীর্ঘস্থায়ী মাথা ব্যথা, কোমর ব্যথা, বুক ব্যথা, আমাশয় বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা।

▶ বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার পরও রোগ ধরা যায়নি এবং বহু চিকিৎসার পরও রোগ ভাল হয়নি এমন শারীরিক কষ্ট।

. মানসিক অসুস্থতার প্রতিকার

▶ অনেকেই মানসিক রোগকে জ্বীন, পরী, ভূত, তাবিজ-তুমার, বান টোনা কিংবা কোন অপশক্তির প্রভাব বলে ভুল করেন।

▶ ওঝা, বৈদ্য, ফকিরের দ্বারা চিকিৎসা করালে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হয়।

▶ সব মানসিক অসুস্থতারই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সম্ভব।

▶ পাবনা মানসিক হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পিজি হাসপাতাল সহ দেশের প্রায় সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক রোগ চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।

▶ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন অপরিহার্য।

কয়েকটি জরুরী কথা

▶ মানসিক রোগীরাও আপনার আমার মত মানুষ।

▶ ‘পাগল’ নয়-বলুন-“মানসিক রোগী”।

▶ মানসিক রোগীকে মারধর করবেন না, তার প্রতি সদয় হউন।

▶ বিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা নয়।

▶ রোগীর চিকিৎসায় আপনার আন্তরিক প্রচেষ্টা রোগীর জন্য কল্যাণ কর।

▶ রোগের শুরুতেই চিকিৎসা গ্রহণ করুন- সুস্থ থাকুন।

Signs & Symptoms of Mental Disorder মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ

মানসিক রোগের লক্ষণ হচ্ছে

▶ কাজকর্মে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা

▶ দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা

▶ অহেতুক ভয় পাওয়া

▶ সামাজিক মেলামেশা হতে বিরত থাকা

▶ একা একা বিড় বিড় করা

▶ নিজেকে অযৌক্তিকভাবে বড় মনে করা

▶ বার বার ধোয়া বা যাচাই করা

▶ একই চিন্তা বার বার করা

▶ দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তি বা অস্থিরতা

মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণসমূহ

▶ মাথা ব্যাথা, সারা শরীরে ব্যাথা

▶ বমি বমি ভাব

▶ দীর্ঘস্থায়ী হজমে অসুবিধা

▶ কোষ্ঠকাঠিন্য

▶ বুক ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা

▶ মনোযোগের অভাব

▶ প্রায়শই ভুলে যাওয়া

▶ অনিদ্রা, খাদ্যে অনিহা

▶ যৌন সমস্যা

মনে রাখবেন

▶ মন ও শরীর একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করে

▶ তাই শারীরিক রোগের কারণে যেমন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তেমনি মানসিক রোগের ফলেও শারীরিক রোগ হয়

▶ সুতরাং মানসিক রোগকে অবহেলা করবেন না এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করুন

▶ মানসিক রোগ ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক জীবনকে পঙ্গু করে দেয়

▶ চিকিৎসার মাধ্যমে মানসিক রোগগ্রস্থ ব্যক্তিকে পুনরায় স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব

▶ মানসিক রোগ কোন পাপের ফল বা জ্বীনের আছর নয় তাই মানসিক ও শারীরিক উভয় রোগকেই সমান গুরুত্ব দেয়া উচিত

শিশুদের মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ

▶ প্রায়ই পেটে ব্যাথা

▶ স্কুলে যেতে না চাওয়া

▶ অতিরিক্ত চঞ্চলতা

▶ অতিরিক্ত লাজুকতা

▶ মনোযোগের অভাব

▶ বেশী বয়স পর্যন্ত বিছানায় প্রশ্রাব করা

▶ বুদ্ধিমত্তার স্বল্পতা

▶ খিঁচুনী

▶ বিষন্নতা

▶ অতিরিক্ত মেজাজী

▶ চুরি করা

▶ মিথ্যা বলা

ASD Fact Sheet শিশুদের অটিজম পিতামাতা/অভিভাবকদের করণীয়

ID Fact Sheet বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুর পিতামাতা/অভিভাবকদের করণীয়

Attention-Deficit/Hyperactivity Disorder (ADHD) অতি চঞ্চলতা ও মনোযোগ হীনতা রোগ

Sleep Hygiene স্বাস্থ্যকর ঘুমের নিয়মনীতি

ঘুম
জীবনের প্রায় তিন ভাগের একভাগ আমরা ঘুমিয়ে কাটাই। পর্যাপ্ত ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি। নৈমিত্তিক জীবনের নানা কারনে এবং প্রায় সকল ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগেই ঘুমের সমস্যা হয়। আমাদের দেহঘড়ির ছন্দ ঠিক রাখা- সুস্থ থাকা ও সুস্থ হবার একটা প্রধান উপায়। এই ঘড়ির ছন্দের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া ও ঠিকমতো ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্বাস্থ্যকর ঘুমের নিয়মনীতি (Sleep Hygiene) :
নিচের নির্দেশনা গুলি ঠিক মতো পালন করলে স্বাস্থ্যকর ঘুম উপভোগ , ঘুমের সমস্যা প্রতিকার, কম ঘুম ও ভাঙ্গা-ভাঙ্গা ঘুম ইত্যাদি ঠিক করা যায়। তবে, নিচের দেয়া নিয়মগুলি মারাত্নক মানসিক রোগ (Psychotic disorder) বা বিষণ্ণতা বা অন্য কোন মানসিক রোগ এর কারনে হওয়া অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যার প্রতিকার নয়। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন।

শিশুদের (০ থেকে ১২ বছর) জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমের ১০ টি বিধিঃ

১। প্রতি রাতে একই সময় ঘুমানোর জন্য যাবে। রাত নয়-টার আগে হলে ভালো হয়।

২। দিনের বেলায় শিশুর বয়স অনুসারে হালকা ঘুমের জন্য সময় নির্দিষ্ট করুন।

৩। শিশুর ঘুমানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন।

৪। আপনার শিশুর ঘরটি ঘুমানোর পরিবেশ উপযোগী যেমনঃ শীতল, অন্ধকার ও শব্দহীন করুন।

৫। শিশুকে নিজে নিজে ঘুমানোর জন্য উৎসাহ দিন।

৬। রাতে ও ঘুমানোর সময় হালকা আলো এবং সকালবেলা ঘর উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত রাখুন।

৭। শিশুকে ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী খাবার ও ভারী ব্যায়াম করতে দিবেন না।

৮। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী যেমনঃ টেলিভিশন, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন শিশুর শোবার ঘরের বাইরে রাখুন এবং ঘুমানোর আগে এসব ব্যবহার হতে শিশুকে দূরে রাখুন।

৯। ঘুমানোর আগে শিশুকে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমনঃ চা, কফি, চকোলেট, সোডা জাতীয় পানীয় ইত্যাদি) খাওয়াবেন না।

১০। প্রতিদিনের রুটিনে খাবার সময় নির্দিষ্ট থাকবে এবং শিশু তা মেনে চলবে।

প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমের ১০ টি বিধিঃ

১। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবেন ও একই সময়ে ঘুম থেকে উঠবেন।

২। যদি আপনার দিনে বা বিকালে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে, তবে তা যেন ৪৫ মিনিটের বেশি না হয়।

৩। বিছানায় যাবার আগে ধূমপান করবেন না।

৪। বিছানায় যাবার আগের ৬ ঘন্টায় ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমনঃ চা, কফি, চকোলেট, সোডা জাতীয় পানীয় ইত্যাদি) খাবেন না।

৫। বিছানায় যাবার আগের ৪ ঘন্টায় ভারী, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত বা অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খাবেন না। তবে হালকা নাস্তা খাওয়া যাবে।

৬। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। তবে, ঘুমাতে যাবার ঠিক আগে ব্যায়াম করা উচিত নয়।

৭। আরামদায়ক বিছানায় ঘুমাবেন।

৮। আপনার শোবার ঘরের তাপমাত্রা যেন আপনার জন্য আরামদায়ক হয় এবং ঘরে যেন মুক্ত বায়ু চলাচলের সুবিধা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

৯। শোবার ঘরে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন শব্দ যেন না হয় সেদিকে নজর রাখুন এবং ঘরটি যথাসম্ভব অন্ধকার রাখুন।

১০। আপনার বিছানাটি শুধুমাত্র ঘুমের ও যৌনকর্মের জন্য বরাদ্দ রাখুন। বিছানা পেশাগত কাজ, খোশগল্প বা বিনোদনের জন্য ব্যবহার করবেন না।

ঘুমের জগত হোক ছন্দময় ও আনন্দের